Tuesday, February 11, 2025
গল্পপ্রেমভালোবাসার গল্পসাহিত‌্য

প্রেমের গল্প: হৃদয়ের বন্ধন -৩য় পর্ব

বন্ধুত্বের শুরু

এক ঝড়বৃষ্টি ভেজা সন্ধ্যায়, রুপা আর সজীব একটি বইয়ের দোকানে প্রথম একে অপরকে ভালোভাবে চিনতে পারে। আগে থেকে পরিচিত না হলেও, সেদিনের কিছুক্ষণ কথোপকথনের পর তারা দুজনেই বুঝতে পারে তাদের মধ্যে অনেক কিছু মিল রয়েছে। দুজনেরই বই পড়ার প্রতি গভীর ভালোবাসা এবং সৃষ্টিশীল চিন্তা তাদের এক সুতোয় বেঁধে ফেলে।

সজীব প্রথমে রুপার পছন্দের বইটি দেখে জানতে চায়, “এই লেখকের বই তুমি আগে পড়েছো?” রুপা উত্তরে বলে, “হ্যাঁ, তার লেখার মধ্যে এক ধরনের যাদু আছে। তুমি পড়েছো?” সজীবের মুখে হাসি ফুটে ওঠে, “হ্যাঁ, অনেকবার। তার লেখা আমাকে সবসময়ই ভাবায়।”

তাদের কথা একের পর এক প্রসঙ্গে এগিয়ে চলে। বইয়ের গল্প, চরিত্র, লেখকদের জীবন, এবং সাহিত্য নিয়ে তাদের আলোচনা গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকে। এই আলোচনার মধ্যেই তারা বুঝতে পারে, শুধু বই নয়, তাদের জীবনের অনেক দিকেই মিল রয়েছে। দুজনেই সঙ্গীত ভালোবাসে, চলচ্চিত্রের প্রতি আগ্রহী, এবং নতুন জায়গায় ভ্রমণ করতে পছন্দ করে।

সজীব এক সময় বলে, “তুমি কি কখনও কাফেতে বসে বই পড়েছো?” রুপা মৃদু হাসে, “হ্যাঁ, প্রায়ই। সেখানে বসে কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে পড়তে ভালো লাগে।” সজীব প্রস্তাব দেয়, “তাহলে আমরা একদিন একসঙ্গে কাফেতে বসে বই পড়তে পারি?” রুপা সম্মতি জানায়, “অবশ্যই, সেটা দারুণ হবে।”

এরপর তারা কয়েকবার একসঙ্গে বিভিন্ন কাফেতে গিয়ে বই পড়ে, গল্প করে। প্রতিবারই তারা নতুন কিছু জানতে পারে একে অপরের সম্পর্কে। এই সময়ের মধ্যেই তাদের বন্ধুত্ব আরো গভীর হয়। সজীবের সাথে সময় কাটিয়ে রুপার মনে হয়, সে এমন একজন মানুষকে পেয়েছে যার সাথে নিজের সকল ভাবনা ভাগ করে নিতে পারে। সজীবও অনুভব করে, রুপার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত তার জীবনে এক নতুন রঙ যোগ করেছে।

তাদের বন্ধুত্ব কেবলমাত্র বই পড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। একদিন, সজীব প্রস্তাব দেয়, “তুমি কি হাঁটতে পছন্দ করো?” রুপা হাসিমুখে বলে, “অবশ্যই, হাঁটা আমার প্রিয়।” তারা শহরের বিভিন্ন পার্ক, পথ এবং নদীর তীরে হাঁটতে থাকে। হাঁটার সময় তারা বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে, কখনও হাসি, কখনও গম্ভীর কথাবার্তা।

এই সময়ের মধ্যেই সজীব রুপার জীবনের ছোট ছোট সুখ-দুঃখের গল্প শুনে। রুপা জানতে পারে, সজীবের জীবনের অনেক কঠিন সময় কাটিয়ে এসেছে এবং তার শক্তি ও ধৈর্য তাকে অনুপ্রাণিত করে। তাদের মধ্যে এই সম্পর্কের মধ্যে এক ধরনের নীরব বোঝাপড়া গড়ে ওঠে।

কিছুদিন পরে, রুপার জন্মদিনে সজীব তাকে সারপ্রাইজ দিতে চায়। সে রুপার প্রিয় লেখকের একটি সাইন করা বই উপহার হিসেবে দেয়। রুপা অত্যন্ত খুশি হয় এবং সজীবকে ধন্যবাদ জানায়, “তুমি কিভাবে জানলে এটা আমার এত প্রিয়?” সজীব মৃদু হাসে, “তোমার কথা শুনেই বুঝতে পেরেছি।”

এই উপহার বিনিময়ের মুহূর্ত তাদের বন্ধুত্বকে আরও দৃঢ় করে। তারা বুঝতে পারে, তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে একটি গভীর সুর রয়েছে যা তাদের একে অপরের প্রতি আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

এরপর তারা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, সঙ্গীতানুষ্ঠানে, এবং আর্ট গ্যালারিতে একসঙ্গে সময় কাটাতে শুরু করে। প্রতিটি নতুন অভিজ্ঞতা তাদের বন্ধুত্বকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। তারা একে অপরের আনন্দে আনন্দিত হয় এবং দুঃখে সমব্যথী হয়।

এইভাবেই সজীব এবং রুপার বন্ধুত্বের শুরু হয়, যা তাদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে দাঁড়ায়। তাদের মধ্যে গড়ে ওঠা এই বন্ধুত্ব ভবিষ্যতে আরও অনেক স্মৃতি এবং অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ হবে, যা তাদের হৃদয়ে স্থায়ী হয়ে থাকবে।

আসছে আরো….

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *