Tuesday, February 11, 2025
Galleryগল্পবিনোদনভালোবাসার গল্প

ভালবাসার গল্প,মায়া ! পর্ব-১২

গল্পঃ মায়া, পর্ব-১২

আজ অরিনের কিছুই ভালো লাগছেনা, বারবার রাহুলের কথাগুলো বুলেটের মতো বিধছে।

আজ রাতের খাবার না খেয়ে প্রতিদিনের ডায়েরীটি উল্টে দেখছে। কিন্তু কিছুই লিখতে পারছেনা। তবুও অনেক চেষ্টায় দুই লাইন লিখলো, আমি রাহুলকে ভালোবাসি, রাহুলকে ছাড়া বাচঁবোনা।

লিখে চোখের কোনে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। ডায়রীটি যেমন ছিলো তেমনি রয়ে গেলো ডায়রীর উপর জলপড়ে লেখাটি ভিজে কাগজটি খসখসে হয়ে পড়লো।
রাহুলের কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে অরিন ঘুমিয়ে পড়লো।

ভোরে ফজরের আযান হতেই অরিনের ঘুম ভেঙে গেলো। অরিনের ঘুম ভেঙে যাওয়ায় বেসিনে গিয়ে মুখ হাত ধৌত করতে করতে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো বেসিনে, অরিন নামাজ নিয়মিত কখনোই পড়েনি, আর কখনোই ফজরের আযানও শুনা হয়নি, সুখের ছোঁয়া কখনো দুঃখকে বুঝতেই দেয়নি, তাই আজ কেনো যেন মুয়াজ্জিন আযান দেওয়ার শেষে যখন মুয়াজ্জিন আসসালাতু খাইরুন মিনান নাওম, অর্থাৎ ঘুম হতে নামায উত্তম, দুইবার উচ্চারণ হতে থাকলো তখনই অরিন অযু করে নামায পড়তে পড়া শুরু করল।

নামাজ শেষে মোনাজাতে বলতে লাগলো, ইয়া আল্লাহ , দয়া করো আমার মনো কামনা পূরণ করো, আমার নামাজ কবুল করো।

আজ শনিবার রহমান মির্জা সাহেবকে দেখতে এসেছে ডাঃ হুমায়ুন ও তার সহধর্মিণী ফাতেমা আহমেদ ও তাদের একমাত্র ছেলে ও মেয়ে। ছেলের নাম রশিদ আহমেদ ও মেয়ের নাম লাভিবা বিনতে হুমায়ুন। তারা বাবার বন্ধু রহমান মির্জা সাহেবকে দেখতে এসেছে।

রহমান মির্জা হুমায়ুনের বন্ধু হলে কি হবে দুজনে সবসময় ঠাট্টা করে বেয়াই বেয়াই বলে দুষ্টুমি করতো, হুমায়ুন বলেও ফেলেছে তোর মেয়েকে আমার ছেলের বউ করলে কেমন হয়?

রহমান মির্জা মেয়ের স্বাধীনতাকে পছন্দ করলেও মনে মনে রহমান মির্জার ছেলেকে পছন্দ করে । আজ রহমান মির্জা একটু আগের চেয়ে দূর্বল অনুভব করছে ।

অরিন, ডাঃ হুমায়ুন, শুভ, রেহানা সকলে মিথ্যা শান্তনা দিয়েছে বটে। মেডিকেল রিপোর্ট অনুসারে রহমান মির্জা আর বেশী দিন বাঁচবেনা তাই সকলে আমন্ত্রিত হলো তার বাড়িতে।

রহমান মির্জা উপর হতে নিচে নেমে আসতে একজন দাড়ী ওয়ালা মতন ছেলে ও ফুটফুটে আট কিংবা দশ হবে এমন একটি মেয়েকে নিচে বসে থাকতে দেখে হুমায়ুনের সাথে ।
ডাঃ হুমায়ুনঃ তুই কেমন আছিসরে রহমান মির্জা ? ,
ভালো বললো হুমায়ুন।
রশিদ দাড়িয়ে সালাম জানালো । রহমান মির্জা মনে মনে অনেক খুশি হলো, এই যুগে এমন ছেলেও থাকে, তাও আধুনিক ডাঃ এর ঘরে!

যাইহোক, রশিদকে রহমান মির্জা সাহেবের মনে ধরেছে।

সকলে মিলে খাবার খেতে বসলো। এমন সময় একটি বিড়াল খাবারের উপর দিয়ে এমন ভাবে লাফ দিলো অনেক খাবার ফ্লোরে পড়ে গেলো। রহমান মির্জা সাহেব আজ একটু অন্য মনষ্ক হয়ে প্রিয় বিড়ালটিকে ইচ্ছে মতো প্রহার করতে লাগলো। এমন সময় রশিদ আহমেদ পড়ে যাওয়া খাবারগুলো তুলে রেখে রহমান মির্জা সাহেবের লাঠিটি ধরে ফেললো!

রহমান মির্জা সাহেব এতোক্ষণে একটু শান্ত হলো, আর বিষ্মিত করে দিয়ে রশিদ আহমেদ বলতে লাগলো আঙ্কেল কোন প্রানীকে প্রহার করলে আল্লাহ নারাজ হন, প্রানী জগতে সবচেয়ে পরিষ্কার ও ভাল প্রাণীদের মধ্যে বিড়াল অন্যতম। পোষা প্রানীদের মধ্যে বিড়ালকে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) খুব ভালোবাসতেন । রশিদ আহমেদ বললেন এরা নিষ্পাপ। রহমান মির্জা সাহেব খুব খুশী হলেন তার ধর্মীয় জ্ঞান দেখে। তার মনের মতো ছেলে মনে হলো।

খাবার শেষ করে হুমায়ুন ও রহমান মির্জা কথা বলছিলো, রহমান মির্জা তোর ছেলে আধুনিক যুগে এতো ধার্মিক আমার চোখকেও বিশ্বাস করতে পারছিনা, তোর ছেলেকে আমার পছন্দ হয়েছে।
ডাঃ হুমায়ুনঃ আমারও তোর মেয়েকে পছন্দ! কি বলিস, তাদের দু হাত এক করে দিতে পারলেই আমরা খুশি!

কথা বার্তার মুহুর্তেই অরিনের প্রবেশ।
-চাচা আসসালামু আলাইকুম, আপনি কেমন আছেন ?

-ওয়ালাইকুম সালাম মামনি, তুমি কেমন আছো ?
-আলহামদুলিল্লাহ চাচা, ভালো আছি।
-তোমাকে আজ একটু শুকনো মনে হচ্ছে যে?
-না আঙ্কেল, এমনিই ।
এই বলে অরিন নিজের রুমে যাবে তখন ড্রয়িং রুমে ফুটফুটে একটি মেয়ের সাথে দাড়ী ওয়ালা একটি ছেলেকে দেখতে পেলো। ছেলেটির গায়ের রং একদম কালো, কিন্তু সুদর্শন। কারা এরা জানতে চেয়েও মন ভালো না থাকায় নিজের রুমে চলে গেলো অরিন।

আর রুমে গিয়েই ডায়রীতে লিখছে, বাবার শরীরের অবস্থা ও আমার মনের অবস্থা কোনটাই ভালো নেই ! হুমায়ুন আঙ্কেল এসেছে, ওনার সাথে আন্টি একটি ছেলে ও মেয়েও এসেছে।
এই কয়েকটি লাইন লিখতে লিখতে ঘুমিয়ে পড়লো……

——————————————————(..আসছে, আরো…)

  • লেখকঃ দেলোয়ার হোসেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *