Saturday, January 25, 2025
topগল্পভালোবাসার গল্প

ভালবাসার গল্প, মায়া ! পর্ব-১৩

রাহুল ভোরের আলো ফোটার আগেই ব্যস্ততায় ঘর থেকে বেরোতে প্রস্তুত। ঠিক তখনই বাবা রহমত আলী তার দিকে তাকিয়ে বললেন, “বাবা, কই যাচ্ছিস এতো সকালে?”

  • “আব্বু, আজ আমার ইন্টারভিউ আছে,” উত্তরে বলল রাহুল।
  • “আচ্ছা, আজ গ্রামে যাওয়ার প্ল্যান ছিল, কিন্তু তুই যখন ইন্টারভিউ দিতে যাচ্ছিস, আল্লাহ তোর সহায় হোন।”

বাবা-মাকে সালাম জানিয়ে রাহুল দ্রুত রওনা দিল। তার হাতে যথেষ্ট সময় থাকলেও শহরের যানজট কাটিয়ে ঠিক সময়ে পৌঁছানো এক রকম অসম্ভব। সবাই যেন আগে পৌঁছাতে মরিয়া, কেউ ট্রাফিক আইন মানতে চায় না।

আজ ভাগ্যক্রমে, আটটা দশের মধ্যেই রাহুল ইন্টারভিউ লোকেশনে পৌঁছে গেল। সাক্ষাৎকার ভালো হয়েছে, তাই সে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল যেন চাকরিটা হয়।

ইন্টারভিউ শেষে রাহুল হেঁটেই বাসার দিকে ফিরছে। তখন পাশ দিয়ে ধীরে আসা একটি গাড়ি থেকে ডাক এলো। চমকে তাকিয়ে দেখল—পুরোনো বন্ধু রিজভী।

  • “ওই রাহুল!” রাহুল থেমে তাকাতেই পুরনো স্কুলের স্মৃতিরা চোখের সামনে ভেসে উঠল।

রিজভী হাসিমুখে বলল, “কিরে, পাশ করার পর তো পুরো লাপাত্তা হয়ে গেলি! যা, উঠে আয়।”

রাহুল দ্বিধা না করেই গাড়িতে উঠে পড়ল। কথোপকথনে তাদের পুরনো বন্ধুত্ব আবারও সজীব হয়ে উঠল।

  • “তোর আব্বু-আম্মু কেমন আছেন?” জিজ্ঞাসা করল রিজভী।
  • “ভালোই আছে।”

গল্পে গল্পে রাহুল জানাল সে আজ একটি ইন্টারভিউ দিয়ে ফিরছে। রিজভী আবেগে বলল, “তুই তো দেখি অনেক দায়িত্বশীল হয়েছিস!”

রিজভীর বাবা বিদেশে ব্যবসা করে, তাই ওদের এখন টাকার অভাব নেই। আজ সে এসেছে তার বোন নওরিনের বিয়ের জন্য। বিয়ের গায়ে হলুদের আয়োজন উপলক্ষে রাহুলকেও দাওয়াত দিল সে।

দুজনে মজা করতে করতে চলে এল রিজভীর বাসায়। সেখানে উপস্থিত রিজভীর মা রোকেয়া বেগম মিষ্টি হাসি দিয়ে বললেন, “এই যে, বহুদিন পরে দেখা দিলি। বাবা-মা কেমন আছে?”

রাহুল সালাম জানিয়ে বলল, “ভালো আছেন, আলহামদুলিল্লাহ।”

এরপর রাহুল আর রিজভী বের হলো কেনাকাটার জন্য। বাজার শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাহুল হঠাৎ চোখে পড়ল, উপরের তলায় অনেক মেয়েদের মাঝে পরিচিত মুখ, অরিন! নওরিনের কলেজ বন্ধু অরিন, যার সাথে রাহুলের একসময় গভীর সংযোগ ছিল।

অরিন রাহুলকে একা পেয়ে ছাদে নিয়ে গেল এবং তাকে শোনাল নিজের মনের কথা। “আপনার কথা ভুলতে পারিনি, রাতে ঘুম আসে না, চোখ বন্ধ করলেই আপনাকে দেখি,” অরিনের কণ্ঠে আবেগ।

অবশেষে রাহুল বুঝল, তার ভেতরেও এক ধরনের মায়া তৈরি হয়েছে। একে ভালোবাসা বলবে কিনা, সেটা এখনও বুঝতে পারছে না।

মেহেদী অনুষ্ঠান শুরু হলো, রাত আটটা বাজে। আর হলঘরে শুভ গিটার হাতে বসে গান ধরল, “আলগা করো গো খোপার বাঁধন…”। রাহুল আর অরিন একে অপরের দিকে তাকিয়ে, মুগ্ধতার জগতে হারিয়ে গেল।

মানুষকে আকৃষ্ট করে এমন এক মায়াময় পরিবেশের মধ্যে রাহুল বুঝতে পারল, জীবন আসলে কত বিচিত্র, কত অজানা মোড়ে ভরা।

———————————————–(….আসছে, আরো….)


লেখকঃ দেলোয়ার হোসেন, বান্দরবান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *