Tuesday, January 28, 2025
topক‌্যাম্পাসচাকুরির খবর

প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড: সময়ের দাবি নাকি অধিকার?

শিক্ষা একটি জাতির উন্নতির প্রধান চাবিকাঠি, এবং সেই শিক্ষাব্যবস্থার পূর্ণতা আসে দক্ষ শিক্ষকদের মাধ্যমে। একজন শিক্ষকই জাতি গঠনের মূল কারিগর। প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা একটি শিশুর ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে তোলে। কিন্তু আমাদের সোনার বাংলায় প্রাথমিক শিক্ষার সহকারী শিক্ষকরা এখনও তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর মর্যাদায় রয়েছেন, যা শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন ছাড়া কিছু নয়। স্নাতক যোগ্যতার অধিকারী এই শিক্ষকরা তাদের কাজের জন্য যোগ্যতার ভিত্তিতে ১০ম গ্রেডের বেতন পাওয়ার দাবি করেন, কিন্তু বাস্তবে তারা ১৩তম গ্রেডে অবস্থান করছেন।

কেনো ১০ম গ্রেড প্রয়োজন?

১. যোগ্যতা অনুযায়ী মূল্যায়ন:
সহকারী শিক্ষকদের নিয়োগ যোগ্যতা এখন স্নাতক। অথচ, সরকারের অন্যান্য বিভাগে একই শিক্ষাগত যোগ্যতার কর্মচারীরা ১০ম গ্রেডে বেতন ভাতা পাচ্ছেন। তাহলে শিক্ষকদের ক্ষেত্রে এই বৈষম্য কেনো? শিক্ষকদের পেশাগত জীবন আরও মর্যাদাপূর্ণ করার জন্য তাদের যোগ্যতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে বেতন কাঠামো তৈরি করা জরুরি।

২. জীবনযাত্রার মান:
বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ১৩তম গ্রেডে থাকা শিক্ষকদের জন্য জীবনযাত্রা পরিচালনা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। সহকারী শিক্ষকদের মূল বেতন এখন ১১,০০০ টাকা, যা ১২তম গ্রেডে মাত্র ৩০০ টাকা বৃদ্ধি পাবে। এই ক্ষুদ্র বৃদ্ধিতে জীবনযাত্রার মান কতটুকু উন্নত হবে? অর্থনৈতিক নিরাপত্তার অভাবে একজন শিক্ষকের পেশাদারিত্ব এবং মনোবল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা সরাসরি শিক্ষার্থীদের উপর প্রভাব ফেলবে।

৩. বৈষম্যের অবসান:
একজন প্রাথমিক শিক্ষক কেবলমাত্র পাঠ্যপুস্তক নয়, বরং মানবিকতা, মূল্যবোধ, ও আচরণগত শিক্ষাদান করেন। অথচ, তাদের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে। একজন শিক্ষকের কাছে শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস গড়ে তোলার দায়িত্ব রয়েছে, যা ভবিষ্যতে দেশ গঠনের মূল চালিকাশক্তি হবে। সুতরাং, শিক্ষকদের সঠিক মূল্যায়ন না করা বৈষম্যেরই নামান্তর।

বিশ্বমানের শিক্ষার জন্য শিক্ষকদের মর্যাদা বাড়ানো জরুরি

উন্নত রাষ্ট্রগুলোতে প্রাথমিক শিক্ষকদের “ভিআইপি” মর্যাদা দেয়া হয়। তাদের বেতন কাঠামোও অনেক উন্নত। সেখানে শিক্ষকদের জন্য সুবিধাজনক আর্থিক পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে, যার ফলে তারা মনোযোগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দিতে সক্ষম। বাংলাদেশেও শিক্ষকদের সেই ধরনের মর্যাদা এবং বেতন কাঠামো দিতে পারলে শিক্ষার গুণগত মান আরও উন্নত হবে।

প্রস্তাবনা

প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড পাওয়ার বিষয়টি কোনো দাবি নয়, এটি তাদের অধিকার। যোগ্যতা অনুযায়ী সঠিক বেতন কাঠামো প্রণয়ন করা হলে শিক্ষকদের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে এবং তারা তাদের পেশাগত জীবনে আরও উৎসাহিত হয়ে কাজ করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। শিক্ষকদের আর্থিক বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করলে, শিক্ষার মান উন্নয়নে তা একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হবে।

লেখক:
সহকারী শিক্ষক বৃন্দ, মমিনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *