প্রেমের গল্প: হৃদয়ের বন্ধন
প্রথম দেখা: এক সন্ধ্যায়… পর্ব-১
রুপা আর সজীবের প্রথম দেখা হয়েছিল এক সন্ধ্যায়, যেটি ছিল মৃদু বাতাসের ছোঁয়ায় মিষ্টি ও রহস্যময়। সেই সন্ধ্যাটি ছিল অন্য রকম। আকাশে সূর্য ডোবার ঠিক আগে, চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল কমলা আর লাল রঙের মিশেল। সেই রঙে পুরো পৃথিবী যেন এক রঙিন স্বপ্নে রূপান্তরিত হয়েছিল।
রুপা তখন একটি বইয়ের দোকানে দাঁড়িয়ে ছিল। সে বইয়ের পাতাগুলিতে ডুবে ছিল, তার প্রিয় কবির নতুন কবিতা সংগ্রহের মধ্যে। বইয়ের দোকানের কোণে ছিল একটি ছোট্ট কফি কর্নার, যেখানে মানুষজন কফি খেতে খেতে বই পড়ত। সজীব সেখানে বসে কফির মগ হাতে নিয়ে বই পড়ছিল। সে মাঝে মাঝে বই থেকে চোখ তুলে আশেপাশের মানুষদের দেখছিল। হঠাৎ তার চোখ পড়ল রুপার দিকে।
রুপার চোখে ছিল গভীর মনোযোগ। সে যেন তার প্রিয় কবির প্রতিটি শব্দ অনুভব করছিল। সজীবের মনে হলো, রুপার মধ্যে কিছু এক বিশেষ আকর্ষণ আছে, যা তাকে এক নিমিষে মুগ্ধ করল। সে আর চোখ সরাতে পারছিল না। এক ধরনের অদ্ভুত অনুভূতি তার মনকে ঘিরে ধরল।
সজীব ধীরে ধীরে রুপার দিকে এগিয়ে যায়। সে দেখে রুপার হাতে সেই বইটি, যা সে নিজেও পড়েছিল কিছুদিন আগে। সজীব বুঝতে পারে, তাদের মধ্যে কিছুটা মিল আছে। সে সাহস করে রুপার কাছে গিয়ে বলে, “এই বইটি আমারও খুব প্রিয়। আপনি কী ভাবছেন এ সম্পর্কে?”
রুপা প্রথমে একটু অবাক হয়েছিল। কিন্তু সজীবের চোখে মুগ্ধতা আর আন্তরিকতা দেখে সে মৃদু হাসে। “আমিও এই কবির অনেক বড় ভক্ত,” সে বলে। তাদের কথোপকথন শুরু হয়েছিল সেই বইয়ের মধ্য দিয়ে। তারা একে অপরের প্রিয় কবিতা, প্রিয় লেখক, আর প্রিয় বই নিয়ে আলোচনা করতে থাকে।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে যায়। কিন্তু তাদের কথা বলা থামে না। তারা বুঝতে পারে, তাদের মধ্যে একটা বিশেষ বোঝাপড়া রয়েছে। কফি কর্নারের কর্মীরা দোকান বন্ধ করার সময় এসে বলে, “দুঃখিত, কিন্তু আমাদের দোকান বন্ধ করতে হবে।” সজীব আর রুপা তখন বাইরে এসে পথের ধারে হাঁটতে থাকে।
রুপা বলে, “আজকের সন্ধ্যা সত্যিই খুব সুন্দর ছিল। এমন সময় আমি আগে কখনও কাটাইনি।” সজীব মৃদু হাসে আর বলে, “আমিও একই কথা বলব। আজকের এই সন্ধ্যা আমার জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকবে।”
তাদের হাঁটতে হাঁটতে শহরের বাতিগুলোর নিচে এক সময় থেমে যায়। তাদের মধ্যে এক অদ্ভুত নীরবতা বিরাজ করে। সেই নীরবতার মধ্যে ছিল একটা অদৃশ্য সেতু, যা তাদের হৃদয়কে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত করেছিল।
রুপা আর সজীবের প্রথম দেখার সেই সন্ধ্যাটি ছিল শুধু একটি শুরু। সেই শুরুতে ছিল অনন্ত সম্ভাবনা, ছিল অজানা অনুভূতির একটি পরিপূর্ণ ঝাঁপি। তাদের মধ্যে যে হৃদয়ের বন্ধন তৈরি হয়েছিল, তা ছিল অটুট আর অমলিন।
প্রথম দেখার সেই সন্ধ্যাটি শুধু একটি মুহূর্তের গল্প নয়, এটি ছিল দুটি হৃদয়ের এক নীরব অথচ গভীর মিতালি। সেই মিতালির আলোকে তারা একে অপরের জীবনকে নতুন রঙে রাঙিয়ে তুলেছিল। তাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত হয়ে উঠেছিল এক একটি নতুন কবিতার পংক্তি, যা তারা একসঙ্গে লিখতে শুরু করেছিল।
আসছে…..