Thursday, November 14, 2024
topগল্পবিনোদনভালোবাসার গল্প

ভালোবাসার গল্প, মায়া,পর্ব-১১

মায়া (পর্ব-১১)

সোমবার সকালটা অরিনের জন্য আরেকটি দুশ্চিন্তার দিন। রহমান সাহেব, তার বাবার শারীরিক অবস্থা ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। গতরাতে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে ডাক্তাররা বলেছিলেন, আজ হাসপাতালে বোর্ড মিটিং বসবে। অরিন, শুভ, আর তার মা শাহিনা বেগম হাসপাতালে বাবার পাশে বসে অপেক্ষা করছে। ডাক্তারদের বোর্ড মিটিং শুরু হয়েছে, সেখানে রয়েছেন ডাঃ হুমায়ুন, ডাঃ এজাজ সহ আরো অনেকে।

ডাঃ এজাজ বললেন, “উনার হার্টের অবস্থা ভালো নয়। আমাদের নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে কয়েকদিন, তারপর দেখা যাবে, বিদেশে চিকিৎসা করানোর প্রয়োজন আছে কিনা।”

ডাঃ হুমায়ুন মাথা নেড়ে সম্মতি জানালেন। রহমান সাহেব একটু চিন্তিত গলায় তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার কী মনে হয়, হুমায়ুন?”

ডাঃ হুমায়ুন হালকা হাসি দিয়ে বললেন, “সেভাবে ভয় পাবার কিছু নেই। এটা গ্যাস্ট্রিক থেকে শুরু হয়ে এপেনডিসাইটিসের সমস্যায় রূপ নিয়েছে। ওষুধগুলো সঠিকভাবে নিলে তিনি পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠবেন।”

এতসব কথার পরেও অরিন বাবার জন্য একধরনের গভীর মায়ায় ভাসছিল। মনটা খুব ভারী লাগছিল। হঠাৎ তার রাহুলের কথা মনে পড়ল। অনেক দিন হয়েছে তার সাথে কোনো যোগাযোগ নেই। পুরনো কিছু মনে করতে করতে অরিন রাহুলের ফোন নম্বর খুঁজে বের করল, কিন্তু নিজের ফোন তো নেই, পাশের দোকানের এক বন্ধুর নম্বর থেকে চেষ্টা করতে হবে।

ততক্ষণে রাত প্রায় একটা। এত রাতে ফোন করলে রাহুলকে কি পাওয়া যাবে? ঘুম আসছিল না, অরিন বইয়ের তাক থেকে সমরেশ মজুমদারের ‘আট কুটুরি নয় দরজা’ তুলে নিল। বইয়ের পাতাগুলোতে হারিয়ে গেল, আর একসময় ঘুম এসে গেল।

সকালে ঘুম ভাঙল প্রায় দশটা নাগাদ। তাড়াহুড়ো করে উঠে ভার্সিটির জন্য তৈরি হতে লাগল। আজ তাকে এসাইনমেন্ট জমা দিতে হবে। নিজেই গাড়ি চালিয়ে ভার্সিটির দিকে ছুটল। রাস্তায় হঠাৎ রাহুলকে দেখতে পেল। গাড়ি থামিয়ে জানালা খুলে বলল, “রাহুল, গাড়িতে ওঠো। তোমার সাথে কিছু কথা আছে।”

রাহুল তেমন কিছু না ভেবেই গাড়িতে উঠে পড়ল।

অরিন জিজ্ঞাসা করল, “তোমাকে আজকে খুব বিমর্ষ লাগছে। কী হয়েছে? কোথায় যাচ্ছ?”

রাহুল একটু হেসে বলল, “একটা কাজে যাচ্ছিলাম, কাছেই।” তবে সত্যি বলতে, সে একটা ইন্টারভিউ দিয়ে ফিরছিল। পকেটে টাকা নেই, তাই হেঁটে বাড়ি ফিরছে।

অরিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “তোমার সাথে কিছু শেয়ার করতে চাই। আমার কথা মনে রাখবে?”

রাহুল জিজ্ঞাসা করল, “কি কথা? বলো শোনার জন্য অপেক্ষায় আছি।”

অরিন গভীর শ্বাস নিয়ে বলল, “আমি খুব একা অনুভব করি। তোমার সাথে পরিচয়ের পর থেকে আর ভালো করে ঘুমাতে পারিনি। সত্যি বলছি, তোমাকে ছাড়া আমার জীবন কেমন শূন্য শূন্য লাগে। তুমি ছাড়া যেন পৃথিবীর সবকিছুই ম্লান মনে হয়।”

রাহুল কিছু বলতে পারল না। সে ভেতরে ভেতরে দ্বিধায় ছিল, পরিবারের কথা ভেবে সে কোনো উত্তর দিতে পারছে না। তার চারপাশে যেন নিস্তব্ধতা নেমে এল। অরিন গাড়ি চালাতে চালাতে আরও অনেক কিছু বলছিল, কিন্তু রাহুলের কানে তেমন কিছুই ঢুকছিল না।

একটু থেমে রাহুল বলল, “আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে। সামনে একটু থামাও, কিছু খেতে হবে।” অরিন গাড়ি থামাল, আর রাহুল একজোড়া কলা আর একটি পাউরুটি নিয়ে গাড়িতে ফিরে এল।

রাহুল বলল, “কিছু খেলাম, এটা তোমার জন্য।”

অরিন খুশি হয়ে বলল, “তোমার বাসায় যাবো আজ।”

রাহুল তৎক্ষণাৎ বলল, “না, আজ নয়, আজ আমার অনেক কাজ আছে।”

অরিন হতাশ হয়ে বলল, “তুমি তো আমাকে সহ্য করতে পার না, তাই না?”

রাহুল কাঁপা গলায় বলল, “নাহ, তা নয়। আমি তোমাকে অনেক পছন্দ করি।”

অরিন চুপ করে গেল, গলার স্বর ভারী হয়ে আসছিল। সে কোনো উত্তর দিল না। চারপাশে যেন অন্ধকার নেমে এলো তার মনে। গাড়ি থামানোর আগে রাহুল আবার বলল, “এখানেই থামাও, আমার গন্তব্য এসে গেছে।”

রাহুল নেমে চলে গেল, আর অরিন ছলোছলো চোখে তাকিয়ে রইল তার পথের দিকে।

———————(চলবে…)

লেখকঃ দেলোয়ার হোসেন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *