রুচি ও অপচয়
ইসলামিক দৃষ্টিকোণ এবং আধুনিক সমাজে প্রাসঙ্গিকতা
মানুষের জীবনযাত্রা, পছন্দ-অপছন্দ এবং উপভোগের মধ্যে রুচি ও অপচয়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রুচি হলো এমন একটি গুণ যা সৌন্দর্য, পরিমিতিবোধ ও সৃজনশীলতার প্রকাশ করে। অন্যদিকে, অপচয় হলো সীমা ছাড়িয়ে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ব্যয় বা ব্যবহার, যা ব্যক্তি এবং সমাজ উভয়ের জন্য ক্ষতিকর। এই প্রবন্ধে আমরা ইসলাম ধর্মের আলোকে রুচি ও অপচয়ের গুরুত্ব, এর উদাহরণ এবং আধুনিক সমাজে এর প্রাসঙ্গিকতা বিশ্লেষণ করবো।
ইসলামের দৃষ্টিতে রুচি ও অপচয়
ইসলাম এমন একটি ধর্ম যা পরিমিতিবোধ এবং ভারসাম্যের ওপর জোর দেয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন:
“নিশ্চয়ই অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই।” (সূরা আল-ইসরাঃ ২৭)
এখানে অপচয়কারীদের শয়তানের ভাই বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে, যা স্পষ্টতই বোঝায় যে অপচয় শুধুমাত্র ব্যক্তির নয়, সমাজের জন্যও বড় এক ক্ষতি। অপরদিকে, রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজে সর্বোচ্চ রুচিশীল মানুষ হওয়ার পরও অত্যন্ত সাধারণ জীবনযাপন করেছেন। তিনি কখনোই বিলাসবহুল পোশাক বা খাদ্যে আকৃষ্ট হননি, বরং সর্বদা প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে জীবনের প্রতিটি দিক পরিচালনা করেছেন।
উদাহরণস্বরূপ:
- রাসুলুল্লাহ (সা.) সাধারণ কাপড় পরতেন এবং তাঁর ব্যবহার্য জিনিসপত্র ছিল খুবই সরল ও প্রয়োজনীয়।
- খাদ্যে অপচয় করতেন না এবং অন্যকেও এ বিষয়ে সতর্ক করতেন।
আধুনিক সমাজে রুচিশীলতা ও অপচয়ের ধারণা
আজকের পৃথিবীতে রুচি ও অপচয়ের মধ্যে অনেক মানুষ বিভ্রান্ত। অনেকেই মনে করেন যে বেশি টাকা খরচ করলেই রুচিশীল হওয়া যায়। কিন্তু প্রকৃত রুচিশীলতা নির্ভর করে সঠিক পছন্দ এবং পরিমিতিবোধের ওপর।
কম খরচে রুচিশীলতার উদাহরণ
বর্তমান পৃথিবীর সবচেয়ে রুচিশীল মানুষের উদাহরণ তাদের মধ্যে পাওয়া যায় যারা কম খরচে উচ্চমানের জিনিস কিনতে জানেন। উদাহরণস্বরূপ:
- এমন ব্যক্তিরা স্থানীয় বাজার থেকে ভালো মানের জিনিসপত্র কেনেন, যা টেকসই এবং সাশ্রয়ী।
- তারা প্রয়োজন ছাড়া বিলাসবহুল জিনিসে আকৃষ্ট হন না এবং তাদের সম্পদকে আরও ভালো কাজে ব্যবহার করেন।
অপচয়কারী সমাজের শত্রু কেন?
যারা অপ্রয়োজনীয় বিলাসবহুল পণ্য কেনেন, তারা কেবল নিজেদের অর্থের অপচয় করেন না, বরং সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট করেন।
ক্ষতিকর দিকসমূহ:
- সামাজিক বৈষম্য: অতিরিক্ত ব্যয়বহুল জিনিস কেনা ধনী-গরিবের ব্যবধান বাড়ায়।
- অর্থনৈতিক সংকট: এ ধরনের প্রবণতা দেশের সম্পদ অপচয় করে এবং স্থিতিশীলতা নষ্ট করে।
- পরিবেশগত ক্ষতি: বিলাসবহুল পণ্য উৎপাদনে প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় ঘটে।
ইসলামের দৃষ্টিতে, এমন আচরণ স্পষ্টতই নিন্দনীয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
“যে ব্যক্তি তার সম্পদ অপচয় করে, আল্লাহ তাকে পছন্দ করেন না।”
(তিরমিজি)
রুচিশীলতা ও টেকসই সমাজ গড়ার প্রয়াস
প্রকৃত রুচিশীলতা হলো পরিমিতিবোধ এবং সঠিক পছন্দের মাধ্যমে সৌন্দর্য সৃষ্টি করা। কম খরচে ভালো মানের জিনিস কেনা এবং সেগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করা রুচির পরিচায়ক। এই অভ্যাস শুধু ব্যক্তিগত উন্নয়ন নয়, সমাজের ভারসাম্য রক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
উপসংহার:
রুচি ও অপচয়ের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে হবে এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই পরিমিতিবোধ বজায় রাখতে হবে। ইসলামের শিক্ষা অনুসরণ করে অপচয় বন্ধ করা এবং রুচিশীল জীবনযাপন করা সমাজের সকল স্তরের মানুষের দায়িত্ব।
পরিশেষে, আমাদের বুঝতে হবে যে, বেশি খরচে রুচি প্রকাশ পায় না, বরং কম খরচে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহারই প্রকৃত রুচিশীলতার নিদর্শন। অপচয়কারী শুধু নিজের নয়, সমাজ ও দেশের শত্রু। তাই, আমাদের উচিত অপচয় এড়িয়ে জীবনযাপন করা এবং প্রকৃত রুচিশীলতার চর্চা করা।