হিমু ও মুক্তিযুদ্ধ
হিমু তখন মাত্র দ্বিতীয় শ্রেনী পার করো তৃতীয় শ্রেনীতে উঠেছে। গ্রামে গ্রামে কতো খেলাধুলা আনন্দ উল্লাস হৈ-চৈ সহ নানান রকম পুঁথি আসর, কবির আসর, যাত্রা পালা ইত্যাদিতে মুখর ছিলো।
তখন হিমুদের গ্রামে ফুটবল খেলার আয়োজন চলছে। চারদিকে আনন্দ উল্লাস , যথারীতি খেলা শুরু হলো, হিমু ও এলো খেলা দেখতে। হিমুর সেকি আনন্দ , টানটান উত্তেজনায় খেলা দেখে বাড়ি ফিরতে লাগলো।
হিমু খেয়াল করলো, তার ছোট মামা রফিক, দেশ নিয়ে কি জানি আলোচনা করতে লাগলো।
এতো সুন্দর একটি খেলা দেখে বাড়ি ফিরছে সকলে সেই খেলা নিয়ে কিছু বলবে না তানা, উনারা দেশ নিয়ে কথা বলছে। রফিক মামা বললো, দেশের কেন্দ্রীয় শাসন শোষনের বিরুদ্ধে আন্দোলন পরিষদ গড়ে তুলতে ছাত্র নেতারা প্রতিবাদ সভা করতে লাগলো, হয়তো এই দেশটা স্বাধীন হয়ে যাবে।
মশিউর বললো, কি বলিস এসব, দেশ দুভাগ হবে, না হবেনা।
রফিক , দেখিস বঙ্গবন্ধু জেল থেকে ছাড়া পাবে, আবার আন্দোলন সংগ্রামের মাধ্যমে সকলকে এক করে দেশকে ভালোবেসে একটি স্বাধীন দেশের উপহার দিবে।
মশি মামা বললো, সত্যি যদি তাই হবে জনগণের দায়ভার কে নিবে ?
একজনের কথায় তো কারো কোনো কিছু যায় আসেনা। রফিক বললো, সঠিক যখন পশ্চিমারা কোনো কিছু চাপিয়ে দেয় তখন কেমন লাগে আমাদের।
ঘৃণা করা ছাড়া কিছুই থাকেনা, যারা প্রতিবাদ করেছে তাদেরকে জেল জুলুমের কারাগারে মরতে হচ্ছে।
রফিক, সঠিক তবে সব শ্রেণীর মানুষ আস্তে আস্তে পুষে উঠছে । নানা রকম নির্যাতন , শোষণ, নিপিড়নের বিরুদ্ধে জেগে উঠবে অচিরেই।
মশিউর বললো, উদের সাথে যুদ্ধে আমরা জিততে পারবোনা কোনো মতে। আমাদের গুলি নাই, অস্ত্র , ট্রেইনিং সহ নানা রকম কৌশল জানা উচিত।
রফিক, আন্দোলন শুরু হলে বন্ধুকের নলেও কিছু হবেনা। জনগণের রক্তের ফোয়ারায় এই দেশের স্বাধীনতা আসবে। সকল অত্যাচারের বিচার হবে।
হিমু কিছু না বুঝেই বললো, মামা আমরা কি এখন পরাধীন?
রফিক হ্যাঁ , তবে সবাই না, যখন বড় হবে তখন বুঝতে পারবে।
হিমু কিছুই বুঝতে পারলোনা, তবে মনে মনে মামাদের কথাগুলো কেমন যেনো স্মৃতিস্পটে আটকে থাকলো।
মাঝে মাঝে হিমুদের গ্রামের রাস্তা দিয়ে মিলিটারিরা আসা যাওয়া করে।
তারা ছোট্ট বাচ্চাদের কি বিস্কুট, চকলেট ও খেলনা দিয়ে খুশি করে।
হিমু ও তাই করে বাচ্চাদের সাথে দল বেধে তাদের দেওয়া জিনিসগুলো খায়।
এদিকে বদরগন্জে মিলিটারিরা গ্রামের মানুষ ধরে নিয়ে নির্দয়ভাবে হত্যা করছে। এই খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। হিমুর আব্বু কলিম শেখ একজন সরকারি চাকরিজীবি। তাই তিনি নিশ্চিত যে দেশে একদিন পরিবর্তন আসবেই। চাকরির মায়না ঠিক ভাবে পায়না সকলে। তাই সরকারি চাকরিজীবীরা ফুষে উঠেছে । আন্দোলনের ডাক দিয়েছে তারা। তাদের নার্য অধিকার দেওয়ার তাগিদে কিন্তু কিছুই হচ্ছে না। চারদিকে শুধু অরাজকতা।
তাই সকল আফিসের কর্মচারীরা জীবন জাতিপাতে বিষণ কষ্টে অতিবাহিত করছে। হিমু ও তার তিন ভাইকে নিয়ে অভাবের সংসার । এদিকে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দিচ্ছে মিলিটারিরা। গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে বহু মানুষ ।
হিমু বিস্ময় ও উচ্ছ্বাস নিয়ে এসব দেখছে শুনছে। হিমুর বাবা তার বন্ধুদের সাথে প্রশিক্ষণে যাওয়ার আগে তাদেরকে তাদের নানু বাড়ি করাচিতে রেখে আসে।
হিমুর মনোস্পটে ছোট বেলার মেলা দেখা, যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা, বাবার নানা রকম উপদেশ কত কি যে মনোক্যম্ভাসে ভেষে উঠতে লাগলো। হিমু মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি , নিজের পিতা দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার জীবন দিয়েছিলো। এই বাংলাদেশ এখন স্বাধীন অথচ কতো অসহায় মানুষ , কতো দুঃখীত মানুষ । অথচ কতো সংগ্রামের পর এই বাংলা ও বাংলাদেশ ।
অতঃপর হিমু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মনে মনে বিড়বিড় করতে লাগলো , এই জন্য কি স্বাধীনতা !
ঘরে প্রবেশ করলো, হিমুর মামা, কিরে হিমু কি ভাবছিলি এতোক্ষণ?
না মামা কিছুনা, না, না তুই কিছু ভাবছিস। হ্যাঁ মামা, আমি মুক্তিযুদ্ধ ও তোমাদের কথোপকথনগুলোতে নষ্টালজিক মুহ্যমান হয়ে গেলাম। দেখোতো মামা এই দেশটি পেতে এতো রক্ত ঝরেছে যে এতো মানুষ প্রাণ দিয়েছে তার বিনিময়ে আমরা কি পাচ্ছি !
রফিক মামা বললো শুনো তাহলে , এই কথাগুলো সত্যি তবে পুরোপুরি না। আমরা স্বাধীন হয়েছি ঠিক অর্থনৈতিক মুক্তি কখনোই ছিলোনা। তলা বিহীণ ঝুড়ি খ্যাত একটি দেশ আজ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে অনেকদূর এগিয়েছে। যেমন আমাদের মৌলিক অধিকার সহ অবকাঠামোগত অনেক উন্নয়ন হয়েছে এখানে । রাস্তা ঘাট, ব্রীজ, কালবার্ট, স্কুল, ইউনিভার্সিটি , হাসপাতাল, আরো কতো কি উন্নয়ন হয়েছে। আরো অনেক উন্নয়ন চলমান।
হিমু সত্যি মামা, তবে আমাদের দেশ দূর্ণীতি, ঘুষ, অবৈধভাবে চোরাচালান সহ মানুষে মানুষে খুন জখম নির্বিচারে মানুষ হত্যা ইত্যাদির ফলাফল এগুলো।
সত্যি এই তো ধরে ফেলেছিস, দেশ থেকে নানা রকম অপকর্ম ও নিয়মশৃঙ্খলা যদি প্রতিষ্ঠিত করা যায় তবে এই দেশ পৃথিবীর উন্নত দেশের রোল মডেল হবে। তবে সরকার এর জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে ! একদিন হবে !
——————————————————————————–
- লেখক : দেলোয়ার হোসেন
- তাং ১৮-১২-২২ খ্রি