৭ই মার্চ জাতীয় দিবস বাতিল:বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক গুরুত্ব।
সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার আটটি জাতীয় দিবস বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছে, যার মধ্যে ৭ই মার্চ জাতীয় দিবস বাতিল নিয়ে তীব্র বিতর্ক শুরু হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম উল্লেখ করেন, “আওয়ামী লীগ আমলে অনেক দলীয় দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল।” তবে ৭ই মার্চের মতো একটি ঐতিহাসিক দিবস বাতিল করায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
৭ই মার্চ, ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ দেশব্যাপী জনগণের স্বাধীনতার চেতনা জাগিয়ে তোলে। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে, ২০২০ সালের আগে দিনটিকে কোনো জাতীয় দিবস হিসেবে পালিত হয়নি।
২০২০ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি, বাংলাদেশ হাইকোর্ট ৭ই মার্চকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করে এবং একই বছরের অক্টোবর মাসে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দিনটি পালনের জন্য পরিপত্র জারি করে। পরবর্তীতে ২০২১ সাল থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রতীকী কর্মসূচি এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দিবসটি বড় পরিসরে উদযাপন শুরু হয়।
তবে ৭ই মার্চ জাতীয় দিবস বাতিল করায় বিভিন্ন মহলে প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সমালোচকরা প্রশ্ন তুলছেন যে ২০২১ সালের আগে এই দিনটি দিবস হিসেবে পালিত না হলেও, এখন তা বাতিল হলে কেন এত প্রতিক্রিয়া হচ্ছে।
বাতিলের পক্ষে মতামত
অনেকেই মনে করেন, ব্যক্তিগত এবং দলীয় দিবসগুলোর ওপর ভিত্তি করে জাতীয় দিবস পালনের প্রচলন সঠিক ছিল না। লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান উল্লেখ করেন, “মাফিয়া সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন দলীয় দিবসগুলোকে জাতির ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা পরবর্তীতে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছিল।”
জাতীয় দিবস বাতিলের বিরোধিতা
অন্যদিকে, দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এবং রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাদের মত প্রকাশ করেছেন। প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ ও সমাজকর্মী আনু মুহাম্মদ ফেসবুকে লিখেছেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ই মার্চের ভাষণ ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এটা মুছে ফেলার চেষ্টা করা উচিত নয়।”
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদের ছেলে, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সোহেল তাজও তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, “৭ই মার্চ এবং ১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস বাতিলের তীব্র প্রতিবাদ জানাই।”
তথ্যসূত্র:
- বিবিসি বাংলা, “৭মার্চের জাতীয় দিবস বাতিল পক্ষে-বিপক্ষে মতামত,” ১৬ অক্টোবর ২০২৪।
- প্রথম আলো, “জাতীয় দিবস বাতিল: অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে বিতর্ক,” ১৪ অক্টোবর ২০২৪।
- দ্য ডেইলি স্টার, “7th March Speech: A Historical Legacy Under Debate,” ১৩ অক্টোবর ২০২৪।
- ইউনেস্কো, “7th March Speech Listed as World Documentary Heritage,” ৩ নভেম্বর ২০১৭।
- বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট, “High Court Judgment on 7th March National Day Declaration,” ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০।