ভালবাসার গল্প, মায়া ! পর্ব-৬
মায়া, পর্ব-৬
রহমত আলীর ছোট বোন আকলিমা খাতুন আজ বেড়াতে এলেন গ্রাম হতে। সাথে একটি মেয়ে ও ছোট একটি বাচ্চা নিয়ে। ছেলেটির নাম কালা চান, মেয়েটির নাম সুন্দরী, নাম সুন্দরীর সাথে সাথে মেয়েটি পরমা, গোলগাল গঠন লম্বা আটপহরা গঠন, এককথায় অসাধারণ। তারা এক ভাই তিনবোন, বোনগুলো গ্রামে বিয়ে হয়, রহমত সবার বড় বাবা এক সময়ে প্রচুর জমি জিরাতের মালিক ছিলো। হঠাৎ রাহুলের দাদা স্টোক করাতে বিভিন্ন ডাক্তার কবিরাজ দেখাতে দেখাতে বেশীর ভাগ জমি বিক্রি করে চিকিৎসা চালান রহমত, এতো কিছু করেও বাবাকে বাঁচানো গেলো না, গ্রামের দশকানি জায়গা হতে পাঁচ কানি বিক্রি করে শহরে এসে বিশ শতক জায়গায় একতলা একটি বাড়ি করেন আর কিছু টাকা দিয়ে ছোটখাটো চায়ের দোকান করে দিনচলে যায়। ঘরটিতে তিনটি রুম ও তিন বাই সাত ফুটের বারান্দা রয়েছে। জনসংখ্যা অনুপাতে জায়গা কম তার উপরে ফুফু ও তার চেলে মেয়ে। যাইহোক একটা ব্যবস্থা অবশ্য হলো।
রাহুল আজ কেন জানি খুব তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে এসে অবাক, চারদিকে সাজ সাজ রব , অসাধারণ সুন্দর সুন্দর ছবিতে প্রতিটি অলিতে গলিতে বিভিন্ন ছবি যেমন, বঙ্গবন্ধুর ভাসনের ছবি, পতাকা হাতে মুক্তিযুদ্ধের ছবি, অভাক করার মত হলো এই ছবিগুলো অরিনের রং তুলির ছোঁয়া , অসাধারণ ছবি আঁকে অরিন ও তার দল। ওহ মনে পড়ে রাহুলের আজতো সাতেই মার্চ
তাই এই সকল করা হচ্ছে । রাহুলের বন্ধু শাকিল, দূর্জয়, রায়হান, আতিক তাকে দেখে সামনে এগিয়ে এলো, আর বলতে লাগলো তোকে আজ বক্তব্য রাখতেই হবে, সেই ছোট বেলা হতেই দেখে আসছি তুই সকল ক্ষেত্রে ফাস্ট। তোর বক্তব্য আজকে শুনবোই, রাহুল, আমাকে না বলে তোরা আমার নাম দিলি কেনো! আজ তোদের ভার্সিটিতে এতো বড় অনুষ্ঠান আগে বললে আমি প্রস্তুত হয়ে আসতাম। আতিক তুই জাত বাচিক শিল্পী, তোর আবৃত্তি, বক্তব্য, গান সকলকেই মুগ্ধ করে। দূর্জয় তোকে আজ কবি দেলোয়ার হোসেনের গান গাইতেই হবে। আমরা সকলে উনার ভক্ত। সকলে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুপড়িতে গিয়ে খিছুড়ি খেলো আর রাহুলকে অনুরোধ করলো কবি দেলোয়ার হোসেনের, এমন করে ভালোবেসোনা গানটি গাওয়ার জন্য রাহল বললো এটাতো অনেক শুনেছো, উনার নতুন একটি গান ” পাগলের প্রলাপ গানটি গাইতে লাগলেন, ঐদিকে অরিন, সাদিয়া, রশনী, ফারুল সকলে রাহুলের গানে মুগ্ধ হয়ে তালি দিতে লাগলো। অরিন মুগ্ধ হয়ে ভাষা হারিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে থাকলো, সাদিয়া কিরে এমন করে চিন্তিত হয়ে গেলি , কবি দেলোয়ার হোসেনের গান কবিতা আমাকে খুব কাছ হতে টানে।
রাহুল আজ আমাকে আরো মুগ্ধ করলো এতো সুন্দর কন্ঠ রাহুলের। রশনী ,তুমিতো দেখছি রিতিমত রাহুলের প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস। নারে মুগ্ধ হচ্ছি , যেদিন লিজার মুখে এসিড নিক্ষেপ করে ঐদিন মানববন্ধনে খারাপ ছেলেগুলো হতে রাহুলই আমাকে রক্ষা করে ছিলো। সেদিন হতে তার প্রেমে পড়েছি তবে তাকে বলি বলি করে বলা হয়নি। দুপুর দুটোতে সভা অনুষ্ঠিত হলো, প্রধান অথিতীদের মধ্যে এলেন মুক্তিযুদ্ধা মন্ত্রী সহ সম্মানিত অথিতীবৃন্ধ। উপস্থাপক ঘোষণা দিলেন ,আজ মহান ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের ঘোষনা দিয়েছিলেন। আজ এই দিবসকে কেন্দ্র করে ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের প্রেরণা সম্পর্কে বক্তব্য রাখবেন, মোঃ আসাদুজ্জামান রাহুল।
তিনি ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের প্রেরণা সম্পর্কে আপনাদের মাঝে কিছু বলবেন, রাহুল নাম ঘোষণার পরপরই স্টেজে উঠে সকলকে সালাম ও কৌশল বিনিময়ের মাধ্যমে বক্তব্য শুরু করলেন ” আজ ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ, এই দিনে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণার মতে সকলে রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত হয়েছিলো ,বঙ্গবন্ধুর ভাসন ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ ভাসন, তিনি শেষ দুটি উক্তির মাধ্যমে জাতিকে মুক্তির পথে ঝাপিয়ে পড়ার মন্ত্রনা দিয়েছিলেন,
” এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম ,
এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম “
শেষে রাহুল বলল, বঙ্গবন্ধু সারা জীবনে জেল জুলুম, নির্যাতনের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলেন তা আজ ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা রয়েছে ।তার আদর্শ ও চেতনায় বলিয়ান হয়ে আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে।
রাহুল বক্তব্য শেষ করার সাথে সাথে মুহু মুহু তালিতে হলরুম ভরে গেলো, সকলে এতো পরিমার্জিত বক্তব্য শুনে বিমোহিত হয়ে পরলেন।
অরিন তো অবাক, এতো সুন্দর বার্তা কিভাবে দিতে পারে, উপস্থিত সকলে মুগ্ধ হলো। অরিন তার প্রতি অনেকটা দূর্বল হয়ে যাচ্ছে !